বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
নামাজের ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাব, মাকরুহ ও নামাজ ভঙ্গের কারণ সমূহ! আসসালামু আলাইকুম আজকে আমি এমন গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট নিয়ে হাজির হয়েছি যা আমাদের জানা অতীব জরুরি ।আমরা নামায আদায় করি কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না নামাজের ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাব, মাকরূহ ও নামাজ কি কারনে ভঙ্গ হয়ে যায় । আর এ বিষয়ে পুরো নিবন্ধন জুরেই আলোচনা করা হবে তাই আপনারা মনোযোগ সহকারে পড়বেন আশাকরি ।
নামাজের ফরজসমূহ (আরকান ও আহকাম):
আহকাম ও আরকান মিলিয়ে নামাজের ফরজ মোট ১৩টি। নামাজ শুরু হওয়ার আগে বাইরে যেসব কাজ ফরজ, সেগুলোকে নামাজের আহকাম বলা হয়।
নামাজের আহকাম ৭টি। যথাঃ
১. শরীর পাক হওয়া।
২. কাপড় পাক হওয়া।
৩. নামাজের জায়গা পাক হওয়া।
৪. সতর বা শরীর ঢাকা।
৫. কিবলামুখী হওয়া
৬. ওয়াক্ত অনুযায়ী নামাজ পড়া।
৭. নামাজের নিয়্যাত করা।
নামাজ শুরু করার পর নামাজের ভেতরে যেসব কাজ ফরজ, সেগুলোকে নামাজের আরকান বলা হয়।
নামাজের আরকান ৬টি।যথাঃ
১. তাকবিরে-তাহরিমা বলা।
২. দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া ।
৩. ক্বেরাত পড়া।
৪. রুকু করা।
৫. সিজদা করা।
৬. শেষ বৈঠক করা।
নামাযের ওয়াজিবসমূহঃ
ওয়াজিব অর্থ হলো আবাশ্যক। নামাযের মধ্যে কিছু বিষয় আছে যা আব্যশক করণীয়। তবে তা ফরজ নয়, আবার সুন্নাতও নয়। যা ভুলক্রমে ছুটে গেলে সিজদায়ে সাহু দিতে হয়।আর ইচ্ছাকৃতভাবে কেউছেড়ে দেয় নামায ভঙ্গ হয়ে যায়। তাই আমাদের ওয়াজিবসমূহ জানতে হবে। নিচে ওয়াজিবসমূহ উপস্থাপন করা হলো । । নামাযের ওয়াজিব মোট ১৪টি।যথাঃ
১. সূরা ফাতিহা পাঠ করা।
২. সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলানো।
৩. তারতীব মত নামায আদায় করা।
৪. প্রথম বৈঠক।
৫. আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করা।
৬. প্রকাশ্য কিরা’আত পাঠ করা।
৭. চুপিসারে কিরা‘আত পাঠ করা।
৮. তা’দীলে আরকান বা ধীরস্থিরভাবে নামায আদায় করা।
৯. রুকু’থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো।
১০. সিজদা থেকে সোজা হয়ে বসা।
১১. সালাম বলা অথবা ( সালাম ফিরানো )
১২. তারতীব ঠিক রাখা।
১৩. দু’আ কুনুত পাঠ করা।
১৪. ঈদের নামাযে তাকবীর।
নামাজের সুন্নাত সমূহঃ
১। আজান ও ইকামত বলা।
২। তাকবিরে তাহরিমার সময় উভয় হাত উঠানো।
৩। হাত উঠানোর সময় আঙ্গুলগুলি স্বাভাবিক রাখা।
৪। ইমামের জন্য তাকবীর গুলিউচ্চ স্বরে বলা।
৫। সানা পড়া।
৬। আউযুবিল্লাহ পড়া।
৭। বিসমিল্লাহ পড়া।
৮। অনুচ্চস্বরে আমীন বলা।
৯। সানা,আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ,আমীন অনুচ্চস্বরে বলা।
১০। হাত বাধার সময় বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা।
১১। পুরুষের জন্য নাভির নিচে,আর মহিলার জন্য বুকের উপর হাত বাঁধা।
১২। এক রোকন থেকে অন্য রোকনে যাবার সময় “আল্লাহু আকবার” বলা।
১৩। একাকী নামাজ পাঠকারির জন্য রুকু থেকে উঠার সময় “সামিয়াল্লাহুলিমান হামিদা” ও “রব্বানা লাকাল হামদ” বলা।
১৪। রুকুতে “সুবহানা রব্বিয়াল আযীম” বলা।
১৫। সেজদায় বলা “সুবহানা রব্বিয়াল আ’লা”।
১৬। রুকুতে উভয় হাটু আকড়ে ধরা।
১৭। রুকুতে পুরুষের জন্য উভয় হাতের আঙ্গুল ফাঁকা রাখা। আর মহিলার জন্য মিলিয়ে রাখা।
১৮। পুরুষের জন্য নামজে বসার সময় বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসা ও ডান পা খাড়া রাখে আঙ্গুলগুলো কেব্লার দিক করে রাখা। আর মহিলার জন্য উভয় পা ডান দিকে বের করে জমিনের উপর বসা।
১৯। শেষ বৈঠকে তাশাহ্যুদের পর দুরুদ শরীফ পড়া।
২০। দুরুদের পর দোয়া পড়া।
নামাজের মুস্তাহাব সমূহঃ
১। দাঁড়ানো অবস্থায় সেজদার স্থানের দিকে, রুকু অবস্থায় উভয় পায়ের পাতার উপর, সেজদার সময় নাকের দিকে, বৈঠকের সময় কোলের দিকে দৃষ্টি রাখা।
২। তাকবীরে তাহরিমা বলার সময় হাত চাদর থেকে বাহিরে বের করে রাখা।
৩। সালাম ফিরানোর সময় উভয় কাঁধের উপর দৃষ্টি রাখা।
৪। নামাজে মুস্তাহাব পরিমান ক্বেরাত( ফজর ও যোহরে তিওয়ালে মুফাস্যাল,সূরা হুজরাত থেকে সূরা বুরুজ পর্যন্ত।আছর ও ইশাতে আওসাতে মুফাস্যাল, সূরা তরেক থেকে বায়্যিনা পর্যন্ত। মাগরীবে কিসারে মুফাস্যাল সূরা যিলযাল থেকে শেষ পর্যন্ত।)পড়া।
৫। জুমআর দিন ফজরের নামাজে প্রথম রাকাতে সূরা আলিফ,লাম,মিম সেজদা ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা দাহর পড়া।
৬। হাই আসলে মুখ বন্ধ রাখার চেষ্টা করা।
৭। যথা সম্ভব কাঁশি ও ঢেকুর চেপে রাখা।
নামাজ মাকরূহ হওয়ার কারণঃ
আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করি কিন্তু নামায যে, কি কারনে মাকরুহ হয়ে যায় বা ( নষ্ট হয়ে যায় ) তা অনেকে জানি না । তাই মুসলমানদের সকলের জানা উচিত ।নিচে তা তুলে ধরা হলো–
১. নামাজরত অবস্থায় কাপড় বা শরীর নিয়ে খেলা করা মাকরূহ, যদি তা আমলে কাসীর না হয় আর আমলে কাসীর হলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে।
২. সেজদার স্থান থেকে কংকর বা পাথরকণা সরানো (মাকরূহ)।
৩. আঙ্গুল সমূহকে মলা বা টেনে ফুটানো ( মাকরুহ )।
৪. হাতের ইশারায় সালামের উত্তর দেয়া।
৫. ফরজ নামাজে বিনা ওজরে আসন করে বসা।
৬. মাটি লেগে যাওয়ার ভয়ে কাপড় হেফাযত করা।
৭. সদলে ছাওব করা অর্থাৎ কাপড় কাঁধে রেখে তার উভয় প্রান্ত একত্র না করে ঝুলিয়ে দেয়া।
৮. কোমরে হাত রাখাও( মাকরূহ )।
৯. ডানে-বামে মুখ ফিরানোর দ্বারা যদি সিনা কেবলার দিক থেকে ফিরে যায় তাহলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে।
আর যদি সিনা কেবলা দিক থেকে না ফিরে, তাহলে নামাজ নষ্ট হবে না; অবশ্য নামাজ মাকরূহ হবে।
১০. উভয় হাটু খাড়া করে হাত মাটিতে রেখে নিতম্ব ও পায়ের উপর কুকুরের ন্যায় বসা।
১১. সেজদায় উভয় বাহুকে মাটিতে বিছিয়ে দেয়া।
১২. হাই তোলা। হাই ও হাচি যথাসম্ভব প্রতিহত করবে। না পারলে সমস্যা নেই।
১৩. শরীরের অলসতা দূর করার জন্য মোচড়ানো।
১৪. চোখ বন্ধ রাখা। অথচ দৃষ্টি সেজদার স্থানে রাখা উচিত।
১৫. চুল মাথার উপর ভাজ করে গিরা দিয়ে নামাজ পড়া।
১৬. খোলা মাথায় নামাজ পড়া মাকরূহ। তবে বিনয় ও নম্রতা প্রকাশের নিমিত্তে এরূপ করলে মাকরূহ হবে না।
১৮. শুধু ইমাম সাহেব মসজিদের মেহরাবে এবং সমস্ত লোক মেহরাবের বাইরে দাঁড়ানো।
১৯. ইমাম সাহেব একা উঁচু স্থানে এবং সমস্ত লোক নিচে দাঁড়ানো।
২০. কাতারে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও পিছনে একা দাঁড়ানো।
তবে যদি সুযোগ না থাকে তাহলে (সামনের কাতার থেকে মাসআলা জানে এমন একজনকে টেনে এনে নিজের সাথে দাড় করাবে। তার পরও চেষ্টা করবেন একা শুধু কাতারে না দাঁড়াতে।
২১. মানুষ অথবা জন্তুর ছবি বিশিষ্ট কাপড় পরিধান করা।
২২. সামনে, বামে অথবা ডানে ছবি থাকাবস্থায় নামাজ মাকরূহ।
নামায ভঙ্গের কারণসমূহঃ
নামায বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য যেমন কিছু শর্ত রয়েছে, তেমনিভাবে নষ্ট হওয়ার জন্যও কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। যা আমরা অনেকে জানি না, আমরা যারা মুসলমান আমাদের সকলের জানা দরকার ।নিম্নে তা তুলে ধরা হলো–
১. সালামের জবাব দিলে : নামাযরত অবস্থায় কারো সালামের জবাব দিলে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে।
২. নামাযের মধ্যে সালাম দিলে
৩. দুঃখসূচক শব্দ উচ্চারণ করা ।
৪. নামাযের মধ্যে কথা বলা।
৫. নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামায পড়লে ।
৬. ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়াজিব ছেড়ে দিলে ।
৭. অট্টহাসি দিলে ( কেননা অট্র হাসি হারাম )
৮. অপ্রাসঙ্গিক কিছু করা : কোনা দুঃসংবাদ শুনে ইন্নালিল্লাহ সুসংবাদ শুনে আল-হামদুলিল্লাহ’ এবং বিক্রয়ের সংবাদ শুনে “সুবহানাল্লাহ’ বললে নামায বিনষ্ট হয়ে যাবে।
৯. অন্য দিকে ঘুরে গেলেঃ নামাযের মধ্যে কিবলার দিক থেকে অন্য দিকে ফিরে গেলে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে।
১০. বাচ্চাকে দুধ পান করালে : নামাযরত স্ত্রীলোকের দুধ যদি তার সন্তান এসে খায়, তবে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে।
১১. হাঁচির জবাব দেয়া : নামাযের মধ্যে যদি কেউ অন্যের হাঁচি শুনে ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলে হাঁচির জবাব দেয়, তবে তার নামায নষ্ট হয়ে যাবে।
১২. চলাফেরা করলে : নামাযের মধ্যে চলাফেরা করলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে। হ্যাঁ, প্রয়োজনে সম্মুখে বা পেছনে যাওয়া যাবে।
১৩. নামাযের ফরয ছুটে গেলে।
১৪. কিরা’আতে ভুল করলে ।
১৫. নামাযে কিরা আত দেখে দেখে পড়া ।
১৬. অপবিত্র স্থানে সিজদা করলে ।
১৭. আমলে কাসীর হলে : নামাযের মধ্যে যদি কেউ আমলে কাসীর করে তবে নামায নষ্ট হয়ে যাবে।
১৮. নিজের ইমাম ছাড়া অন্যকে লোকমা দেয়া ।
১৯. নামাজে দুনিয়াবী কথাবার্তা বলা।
২০. নামাযে কাতার সোজা না করে নামায পড়া ।
২১. বিনা অজুতে নামায পড়া
২২. কোনো পত্র বা লেখার প্রতি দৃষ্টি পড়ায় তা মুখে উচ্চারণ করলে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে।
২৩. তিন তাসবীহ পাঠ পরিমাণ সময় সতর খুলে থাকা ।
২৪. নামাযরত অবস্থায় খাওয়া বা পান করা ।
শেষ কথা :পরিশেষে একটি কথা, পোস্টটি সকল মুসলমানদের উদ্দেশে শেয়ার করবেন ইনশাআল্লাহ |