শবে কদরের রাত: আমল, দোয়া, চেনার উপায়, বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত (Shab-e-Qadr Dua, Amal, Cenar Upay, Fojilot)
শবে কদরের রাত: আমল, দোয়া, চেনার উপায়, বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত (Shab-e-Qadr Dua, Amal, Cenar Upay, Fojilot)! প্রিয় পাঠকগণ আসসালামু আলাইকুম অগ্রিম ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আজকের এই আর্টিকেলের আলোচনা আজকের এই আর্টিকেল টি মুসলিম উম্মার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল হতে চলেছে। আর সেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় টা হলো লাইলাতুল কদরের রাত নিয়ে কিছু কথা ,লাইলাতুল কদরের রাত একটি মহা মূল্যবান রাত যে রাত আল্লাহ তায়ালা এমন মর্যাদা পূর্ণ করেছেন যা আর অন্য কোন রাতের সাথে তুলনা হয় না। এই রাতে মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন হাজার মাসের ইবাদতের সমান সওয়াবের কথা বলেছেন। এই রাত মুসলিম উম্মার জন্য একটি অফারেরা রাত এই রাত যার কপালে জুটবে সে হাজার মাসের সওয়াব তার আমল নামায় লিপিবদ্ধ করে দিবে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন।
লাইলাতুল কদর অন্য রাত্রির চেয়ে উত্তম আল্লাহ তাআলা লাইলাতুল কদর তার বান্দার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত দান করেছেন। আর সেই রাত হল লাইলাতুল কদর, লাইলাতুল কদরে আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন এত গুরুত্বপূর্ণ এক রাত করে দিয়েছেন। যা মুসলিম উম্মার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত আর এই রাত আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেনঃ তোমরা রমজান মাসের শেষ দশকের বিজর রাত্রিতে তোমার তালাশ করো লাইলাতুল কদরের জন্য।
লাইলাতুল কদরের রাত নিয়ে কিছু কথা
লাইলাতুল কদরের রাত মুসলিম উম্মার জন্য একটি সর্বশ্রেষ্ঠ রাত এই রাতে মহান রাব্বুল আলামিন এত পরিমাণ সাওয়াব দান করবেন। যা মুসলিম উম্মার জন্য একটি সর্বশ্রেষ্ঠ রাত এই রাত আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন শরীফে বলেছেন যে ব্যক্তি পবিত্র লাইলাতুল কদর পেল সে হাজার মাসের সকল ইবাদতের সমান সওয়াব তার আমলনামায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন লিপিবদ্ধ করে দিবেন। সেজন্য আমাদের মুসলিম উম্মার সকলের উচিত পবিত্র রমজানের শেষ দশকের বেজোর রাত্রিগুলোতে লাইলাতুল কদরের তালাশ করা। এবং আল্লাহ তা’আলার সানিধ্য লাভ করা, যা আল্লাহ রব্বুল আলামিন অসংখ্য সওয়াব তার আমলনামায় লিপিবদ্ধ করে দিবেন।
শবে কদর (লাইলাতুল কদর) ইসলামে এক বিশেষ রাত, যা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মুসলিমদের জীবনে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। শবে কদর সেই রাত যখন কুরআন শরীফ নাযিল হয়েছে এবং এই রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের সমান মর্যাদা পায়। আল্লাহ তায়ালা এ রাতে ক্ষমার দানবর্ষণ করেন, গুনাহ থেকে মুক্তির সুযোগ দেন এবং মুমিনদের জন্য অশেষ পুরস্কার ঘোষণা করেন।
শবে কদরের ফজিলত ও গুরুত্ব
শবে কদরের রাতে ইবাদত করলে হাজার মাসের ইবাদতের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। এই রাতের ফজিলত নিয়ে আল্লাহ নিজেই কুরআন মাজিদে বলেন:
“নিশ্চয়ই, আমি এটি কদরের রাতে অবতীর্ণ করেছি। এবং আপনি জানেন কি, কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।”
(সূরা আল-কদর: আয়াত ১-৩)
এই রাতের ফজিলতের কারণে প্রতিটি মুসলিমের উচিত বিশেষ ইবাদত, দোয়া এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য এই রাতকে যথাযথভাবে কাটানো।
শবে কদরের চেনার উপায় ও বৈশিষ্ট্য
শবে কদর নির্দিষ্ট কোনো দিন নয়, বরং রমজানের শেষ দশ রাতের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে এই রাতকে খোঁজা হয়। সাধারণত ২১, ২৩, ২৫, ২৭, অথবা ২৯তম রাতে শবে কদর হতে পারে। এই রাত চেনার কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে:
- শান্তিময় রাত
শবে কদরের রাত অত্যন্ত শান্ত ও নিরিবিলি হয়ে থাকে। এই রাতে কোনো প্রকার ঝড়-তুফান থাকে না, বাতাস শীতল এবং আরামদায়ক হয়। - সূর্যোদয়ের ভিন্নতা
শবে কদরের পরের দিন সূর্য একটি নির্দিষ্টভাবে উজ্জ্বল এবং কম তেজ নিয়ে উদিত হয়। - অসাধারণ প্রশান্তি ও স্নিগ্ধতা
এই রাতে আল্লাহর রহমতের কারণে মুমিনদের মধ্যে একধরনের অদ্ভুত প্রশান্তি এবং স্নিগ্ধতা অনুভূত হয়।
শবে কদরের রাতের বিশেষ আমল
এই রাতটি অত্যন্ত বরকতময়, তাই এ রাতে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য বেশি বেশি আমল করতে হবে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল:
- নফল নামাজ আদায়
শবে কদরের রাতে যত বেশি সম্ভব নফল নামাজ আদায় করুন। বেশি বেশি রাকাত পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা খুবই ফজিলতপূর্ণ। - কুরআন তিলাওয়াত
এ রাতে কুরআন তিলাওয়াত করলে সওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। তাই নিয়মিতভাবে কুরআন তিলাওয়াত করুন এবং আল্লাহর কিতাবের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করুন। - আস্তাগফার (তওবা) করা
এ রাতে অধিক পরিমাণে আস্তাগফার করুন। আল্লাহ এই রাতে তার বান্দাদের ক্ষমা করেন এবং গুনাহ থেকে মুক্তি দান করেন। - দোয়া করা
শবে কদরের রাতে দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। প্রিয় নবী (সা.) এ রাতে নিম্নোক্ত দোয়া পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন:“আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি”
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে পছন্দ করেন, সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন।”
শবে কদরের দোয়া ও ইবাদত
শবে কদরের রাতে আল্লাহর নিকট দোয়া করলে তা কবুলের বিশেষ সম্ভাবনা থাকে। কিছু দোয়া এবং ইবাদত করা উচিত:
- দোয়া করা ও ক্ষমা প্রার্থনা
এই রাতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং নিজের ও পরিবারের সকলের জন্য কল্যাণ প্রার্থনা করুন। আল্লাহর দয়াকে আহ্বান করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। - সালাতুত তাসবিহ পড়া
সালাতুত তাসবিহ নামাজ শবে কদরের রাতের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। এটি পড়ে আল্লাহর কাছে নিজের পাপের জন্য ক্ষমা চাওয়া যায়। - আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহ জপ করা
আল্লাহর ৯৯টি গুণবাচক নাম স্মরণ করুন এবং সেগুলো বেশি বেশি জপ করুন। আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শবে কদরের রাতে কী দোয়া করা উচিত?
শবে কদরের রাতে দোয়া করলে তা কবুলের বিশেষ সম্ভাবনা থাকে। প্রিয় নবী (সা.) এ রাতে বিশেষভাবে ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়াও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া হলো:
- ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা আল-আফওয়া ওয়াল-আফিয়া”
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট ক্ষমা এবং মঙ্গল প্রার্থনা করছি।” - দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের জন্য দোয়া
“রব্বানা আতে না ফিদ্দুনিয়া হাসানাতান, ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতান, ওয়া কিনা আযাবান নার”
অর্থ: “হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন এবং আখিরাতে কল্যাণ দান করুন এবং আমাদের জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন।”
শবে কদরের রাতে কোন সূরা পড়তে হয়?
শবে কদরের রাতে নির্দিষ্ট করে কোনো সূরা পড়ার নির্দেশনা দেওয়া না থাকলেও, বিশেষ কিছু সূরা তিলাওয়াত করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। এই রাতে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য যেকোনো সূরা পড়া যেতে পারে, তবে নিম্নলিখিত কয়েকটি সূরা বেশি তিলাওয়াত করা হয়:
- সূরা আল-কদর
শবে কদরের রাতের তাৎপর্য ও ফজিলত বুঝতে সূরা আল-কদর পড়া উত্তম। এতে বলা হয়েছে যে, এই রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। - সূরা ইখলাস
সূরা ইখলাস আল্লাহর একত্ববাদকে বোঝায় এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থাকে সুদৃঢ় করে। এই সূরা বেশি করে পড়লে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। - সূরা ফাতিহা
সূরা ফাতিহা সমস্ত ইবাদতের মূল এবং কুরআনের মূল বিষয়বস্তু ধারণ করে। এটি আল্লাহর প্রশংসা ও পথপ্রার্থনার সূরা, যা এই রাতের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। - সূরা ইয়াসিন
শবে কদরের রাতে সূরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করা অনেক ফজিলতপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি ইবাদতে বরকত এবং আল্লাহর রহমত লাভের জন্য উপকারী।
শবে কদরের রাতে সহবাস করা যাবে কি?
শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে শবে কদরের রাতে স্বামী-স্ত্রীর সহবাস করা নিষিদ্ধ নয়। ইসলাম এই রাতে স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের ব্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। রমজান মাসে ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সহবাস বৈধ এবং এতে কোনো সমস্যা নেই।
তবে যেহেতু শবে কদরের রাতটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ এবং এই রাতের ইবাদত অত্যন্ত সওয়াবের, তাই অধিকাংশ আলেম এই রাতে বেশি বেশি ইবাদত করার এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের পরামর্শ দেন। সহবাসের চেয়ে ইবাদতকে অগ্রাধিকার দেওয়া উত্তম বলে মনে করা হয়।
উপসংহার
শবে কদরের রাতের বিশেষ ফজিলত ও বরকতের কথা মাথায় রেখে এই রাতকে ইবাদতের মাধ্যমে পূর্ণ করা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য এই রাতের আমল, দোয়া ও ইবাদত করা উচিত। শবে কদরের রাত আল্লাহর রহমতের রাত, যেখানে আমাদের সমস্ত গুনাহ মাফের সুযোগ রয়েছে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই রাতের বরকত লাভের তৌফিক দান করুন। আমিন।