ক্রোধ ও অহংকার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাদিস (Important Hadith about Anger and Pride)! আসসালামু আলাইকুম আজকে আমরা আলোচনা করব হযরত মুহাম্মাদ (সা:)এর মুখশ্রীত বাণী হাদিস বিষয় হচ্ছে ক্রোধ ও অহংকার । ক্রোধ অহংকার নিয়ে আমরা মানুষেরা নিজের অহংকার নিয়ে ব্যস্ত থাকি কোথায় কোথায় অহংকার করে থাকি নিজেকে অন্য সকলে চেয়ে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করতে চাই। তাই আপনারা যারা অহংকার নিয়ে হাদিস খুজতেছেন তাহলে আপনাকে আমাদের এই পোস্টে স্বাগতম । ক্রোধ ও অহংকার হচ্ছে এমন একটি বিষয় যা মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায় ।আর যে মানুষের অহংকার একেবারেই বেশি সে সমাজের চোখে মানুষ ভালোভাবে দেখে না পরবর্তীতে সে সমাজের কাছে লাঞ্ছিত বঞ্চিত হয়ে যায় তার ক্রোধ ও অহংকারের কারনে।
আর বর্তমান সমাজে অহংকার মানুষের মধ্যে বিরজমান অহংকারের কারনে মানুষেরা একে অপরকে সম্মান দেয় না নিজেকে বড় মনে করে। সেজন্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন অহংকার থেকে নিজেকে বিরত রাখার জন্য রাগ করা যাবেনা নিচেই আলোচনা করা হলো নবী করীম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এর মুখশ্রীত বাণী বা হাদিস নিচে পর্যায়ক্রমে হাদীসগুলো আলোচনা করা হলো ক্রোধ ও অহংকার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাদিস গুলো–
ক্রোধ ও অহংকার
নবী করীম (সা:) ক্রোধ ও অহংকার নিয়ে সাবধান করে দিয়েছেন। অহংকারের কারনে মানুষ নিজেকে অনেক বড় ভেবে ফেলে বড়দেরকে সম্মান দিতে পারে না। এককথায় সে নিজেকে সবার চেয়ে নিজেকে বড় মনে করবে। সেই ব্যক্তিদের জন্য নবী করীম (সা:) বলেছেন কেয়ামত দিবসে তারা সবচেয়ে বেশী লাজ্ঞিত হবে সবার কাছে সেজন্য নবী করীম (সা:)ক্রোধ ও অহংকার থেকে বিরত থাকতে বলেছেন ।নিচে দেওয়া হলো ক্রোধ ও অহংকার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাদীসগুলো—
প্রথম হাদিস শরিফ
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু হোরায়রা (রা:)হতে বর্ণিত।একদা এক ব্যক্তি
নবী করীম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম -এর কাছে আরজ করল,
আমাকে কিছু উপদেশ দিন তিনি (রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম) বললেন
তুমি রাগ করবে না। অতঃপর সে লোকটি
বারবার একই কথার পুনরাবৃত্তি করল।
রাসূল (সা:) প্রত্যেকবারই বললেন তুমি রাগ
করবে না।
(বুখারী শরীফ)
দ্বিতীয় হাদিস
হযরত আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:)ইরশাদ করেছেন,
সে ব্যক্তি শক্তিশালী বীর নয়,
যে মানুষকে আছাড় দেয়, বরং সে ব্যক্তি
প্রকৃত শক্তিশালী বীর, যে রাগের সময়
নিজেকে সংবরণ করতে সক্ষম হয় ।
(বুখারী ও মুসলিম)
তৃতীয় হাদিস শরীফ
হযরত হারেসা ইবনে ওহাব(রা:) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:)বলেছেন, আমি কি
তোমাদেরকে বেহশতবাসী লোকদের সম্পর্কে সংবাদ দেবো
না? তারা হলেন বৃদ্ধ ও দুর্বল লোক। তারা যদি আল্লাহর
দরবারের শপথ করে, তখন আল্লাহ তাদের সেই শপথ সত্যে
পরিমিত করে দেন। তিনি আরো বলেছেন, আমি কি
তোমাদেরকে জাহান্নামবাসী লোকদের সম্পর্কে সংবাদ দেব না?
তারা হলো মিথ্যা ও তুচ্ছ বস্তু নিয়ে ঝগড়া বিবাদ কারি শান্ত
মস্তিষ্কে ধন-সম্পদ সঞ্চয়কারী ও অহংকার কারী
(বুখারী ও মুসলিম)
চতুর্থ হাদিস শরিফ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:)হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূল (সা:)বলেছেন, যে
ব্যক্তির অন্তরে একটি সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান রয়েছে,
সে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না এবং যে ব্যক্তির অন্তরে
একটি সরিষার দানা পরিমাণ অহংকার রয়েছে, সে জান্নাতে
প্রবেশ করতে পারবে না।
(মুসলিম শরীফ)
পঞ্চম হাদিস শরীফ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:)বলেছেন, যার
অন্তরে বিন্দু পরিমাণ অহংকার আছে, সে জান্নাতে প্রবেশ
করতে পারবে না। অতঃপর এক ব্যক্তি আরজ করল, (হে
আল্লাহর রাসূল) সকলেই তো এটা পছন্দ করে যে, তার
পোশাক ভালো হোক, তার জুতা ভালো হোক, এসব কি
অহংকারের মধ্যে শামিল হবে? তিনি রাসুল (সা:)বললেন
নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা নিজেই সুন্দর, তিনি সৌন্দর্যকেই পছন্দ
করেন। আর অহংকার হল সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা
এবং মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করা।
(মুসলিম)
ষষ্ঠ হাদিস শরিফ
হযরত আবু হুরায়রা (রা:)হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:)ইরশাদ করেছেন তিন
শ্রেণীর মানুষ রয়েছে, যাদের সাথে কিয়ামত দিবসে আল্লাহ
তায়ালা কথা বলবেন না এবং তাদেরকে পাপ পঙ্কিলতা থেকে
পবিত্র করবেন না। অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি (আল্লাহ
তা’আলা) তাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না। আর
তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি। তারা হচ্ছে বৃদ্ধ
ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী বাদশাহ বা রাষ্ট্রপ্রধান ও অহংকারী গরিব।
(মুসলিম)
সপ্তম হাদিস শরীফ
হযরত আবু হুরায়রা (রা:)হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সা:)ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ
তা’আলা, অহংকার আমার চাঁদরস্বরুপ আর শ্রেষ্ঠত্ব
আমার লুঙ্গিস্বরুপ। অতএব যে ব্যক্তি এ দুটির কোন একটি
আমার কাছ থেকে কেড়ে নেবে, আমি তাকে জাহান্নামে
প্রবেশ করাবো । অন্য এক বর্ণনায় আছে, তাকে জাহান্নামে
নিক্ষেপ করব।
(মুসলিম শরীফ)
অষ্টম হাদিস শরীফ
হযরত সালমা ইবনে আকওয়া (রা:)হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করেছেন,
এমন এক ব্যক্তি আছে, যে সর্বদা নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করে,
মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে থাকে, এমনকি তার নাম
উদ্ধত অহংকারীদের দলে লিখে দেয়া হয় । আর উদ্ধত
অহংকারীদের উপর যে বিপদ অবতীর্ণ হয়, তার উপর সে
বিপদই অবতীর্ণ হয় ।
(তিরমিযী)
নবম হাদিস শরীফ
তাবেয হযরত আমর ইবনে শোয়াইব (রা:)হতে বর্ণিত।
তিনি তার পিতার মাধ্যমে তার
দাদা হতে বর্ণনা করেন, তার দাদা রাসুলুল্লাহ (সা:) হতে বর্ণনা
করেন। রাসুল (সা:) বলেছেন, কেয়ামত দিবসে
অহংকার কারীদেরকে মানুষে আকৃতিতে ছোট পিপিলিকার ন্যায়
একত্রিত করা হবে সকল দিক ও স্থান হতে অপমান তাদেরকে
হিরে থাকবে। তাদেরকে ‘ইয়াওলাস’ নামক জাহান্নামের এক
কারাগারের দিকে হাঁকিয়ে নেয়া হবে। তাদের উপর আগুনের
কুণ্ডলী হবে এবং তাদেরকে জাহান্নামীদের নিংড়ানো পচা রক্ত
ও পুচ পান করানো হবে, যার নাম ‘তীনাতিল খাবাল’
(তিরমিযী)
দশম হাদিস শরীফ
হযরত আতিয়্যাহ ইবনে ওরওয়া
সায়দী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ
করেছেন, রাগ শয়তানের পক্ষ থেকে আসে এবং শয়তানকে
আগুন দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আগুন পানি দ্বারা নেভানো যায়।
আর যখন তোমাদের মধ্যে কারও রাগ আসে, তবে সে যেন অজু করে
(আবু দাউদ)
11 নং হাদিস শরীফ
হযরত আবু যর (রা:) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:)বলেছেন, যখন তোমাদের কারো
রাগ বা ক্রোধ আসে, এমতাবস্থায় যে সে দাঁড়ানো, তবে সে
যেন বসে পরে, যদি এতে তার রাত চলে যায় তো ভালো
কথা অন্যথায় সেজন্য চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে।
(আহমদ ও তিরমিজি)
12 নং হাদিস শরীফ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা:)
হতে বর্ণিত ।তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন মহীয়ান ও
গরীয়ান আল্লাহর দৃষ্টিতে কোন বান্দা রাগের ঢোকের চেয়ে
উত্তম ঢোক গিলে না, যা তিনি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য
গিলেন।
(আহমদ)
13 নং হাদিস শরীফ
হযরত ওমর (রা:)হতে বর্ণিত।
একদা তিনি মেম্বারের উপর দাঁড়িয়ে বললেন, হে লোক সকল
তোমরা বিনয়ী হও । আমি রাসূল (সা:) কে বলতে শুনেছি,
যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য বিনয়ী হয়,
আল্লাহ তাআলা তার মজুরী বৃদ্ধি করে দেন। সে নিজেকে
নিজে ছোট মনে করে, কিন্তু মানুষের চোখে সে খুবই মহান ও
সম্মানিত হয়। আর যে ব্যক্তি অহংকার করে, আল্লাহ তা’আলা
তাকে হেয় করে দেন, আর সে মানুষের দৃষ্টিতে ছোট, অথচ
সে নিজের কাছে খুবই বড় ।এমনকি সে শেষ পর্যন্ত মানুষের
সুখী কুকুর ও শুকুরের চেয়েও অধিক ঘৃণিত বলে বিবেচিত হয়।
14 নং হাদিস শরীফ
হযরত আবু হোরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:)ইরশাদ করেছেন, তিনটি
জিনিস পরিত্রাণকারী এবং তিনটি জিনিস ধ্বংসকারী।
পরিত্রানকারী জিনিসগুলো ভালো হলো-১ প্রকাশ্যে ও গোপনে
আল্লাহকে ভয় করা। 2 সন্তুষ্ট ও অসন্তুষ্ট উভয় অবস্থায় উচিত
কথা বলা। 3 ধনি ও দরিদ্র উভয় অবস্থায় মধ্যমপন্থা অবলম্বন
করা। ধ্বংসকারী জিনিসগুলো- 1 প্রবৃত্তির অনুসারী হওয়া।
2 লোভ লালসা করা। 3 কোন ব্যক্তি নিজেকে সম্মানীত মনে
করা। আর এটাই সবচেয়ে খারাপ স্বভাব।
(বায়হাকী) 15 নং হাদিস শরিফ
হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন যে ব্যক্তি নিজের জিহ্বাকে সংযত
রাখে, আল্লাহ তাআলা তার দোষ ক্রটি ঢেকে রাখেন।যে
ব্যক্তি তার রাগকে থামিয়ে রাখে, আল্লাহ তায়ালা কেয়ামত
দিবসে তার থেকে শাস্তি থামিয়ে (মাফ করে) দেবেন। আর
যে ব্যক্তি নিজের কৃত পাপের জন্য আল্লাহ তাআলা দরবারে
অজুহাত পেশ করে, আল্লাহ তা’আলা তার অজুহাত কবুল
করেন।
(বায়হাকী)
16 নংহাদিস শরীফ
হযরত আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করেছেন, হযরত
মুসা ইবনে ইমরান (আ) আল্লাহ তাআলার কাছে আরজ
করলেন হে প্রভু, আপনার আপনার বান্দাদের মধ্যে তোমার কাছে
সর্বাধিক প্রিয় কে? আল্লাহ তায়ালা বললেন, প্রতিশোধ গ্রহণের
ক্ষমতা থাকলেও যে ক্ষমা করে দেয়।