আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। লাইলাতুল কদর বা শবে কদর, ফারসি ভাষায় শাব ও আরবি ভাষায় লাইলাতুল যার অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী। অন্যদিকে কদর শব্দের অর্থ সম্মান মর্যাদা মহাসম্মান। এছাড়া এর অন্য অর্থ হলো ভাগ্য পরিমাপ ও তাকদীর নির্ধারণ করা। আর লাইলাতুল কদর বা শবে কদর এর পরিপূর্ণ অর্থ হলো ভাগ্য রজনী ভাগ্য পরিমাপ করার রজনী।এই লাইলাতুল কদর বাস শবে কদর এর গুরুত্বপূর্ণ অপরিসীম এই ভাগ্য রজনীর গুরুত্ব বলে বোঝানো যাবে না এবং আলোচনা করে শেষ করা যাবে না তাই আপনাদের সামনে ছোট্ট একটি আলোচনা তুলে ধরা হলো।
ইসলাম ধর্ম অনুসারে এ রাতে ইসলাম ধর্মের ধর্মপ্রচারক মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম এর অনুসারীদের সম্মান বৃদ্ধি করা হয় এবং মানবজাতির ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়। তাই মুসলমানদের কাছেই এই রাত অত্যন্ত পূর্ণময় ও মহামান্বিত হিসেবে পরিগণিত। কুরআনের বর্ণনা অনুসারে এই রাত্রিকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। এই একটি মাত্র রজনীর ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে অধিক সওয়াব অর্জিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে প্রতিবছর মাহে রমাজানে এই মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুল কদর বা শবে কদর মুসলমানদের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে।
মুসলমানদের কাছে শবে কদরের গুরুত্ব অপরিসীম। কুরআনে সূরা কদরে উল্লেখ আছে হাজার মাস উপাসনায় যে পূর্ণ হয়। এই শবে কদরের এক রাত তার চেয়ে উত্তম লাইলাতুল কদরের রাতে সৎ এবং ধার্মিক মুসলমানদের উপর আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয় ।লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের মুসলমানরা আল্লাহর কাছে মাগফিরাত, নাজাত ,ও ক্ষমা পাওয়ার পরম সুযোগ লাভ করে। লাইলাতুল কদর সম্পর্কে আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি এই রাত ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করবে আল্লাহ তার পূর্বের কিছু সব গুনা খাতা মাফ করে দিবেন (বুখারী)।
হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী লাইলাতুল কদরের রজনীতে যারা আল্লাহ তাআলার আরাধনায় মগ্ন থাকবে স্রষ্টা তার ওপর থেকে জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিবেন।হাদিস অনুযায়ী রমজানের শেষ দশকের বিজোর রাত্রি গুলোতে শবে কদর হতে পারে। তবে ২৬ রমাজান দিবাগত রাতেই লাইলাতুল কদর আসে বলে আলেমগণ তাদের মতবাদ প্রকাশ করেছেন আয়েশা(রা) থেকে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ আছে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন তোমরা রমজানের শেষ দশ রাত শবে কদর সন্ধান করো (বুখারী ও মুসলিম)
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর স্ত্রী আয়েশা (রা) তাকে জিজ্ঞেস করলেন শবে কদর সম্পর্কে হে রাসুল আল্লাহ আমি যদি লাইলাতুল কদর পাই তখন কি করব? তখন নবী বলেন, তুমি বলবে হে আল্লাহ আপনি নিশ্চয়ই ক্ষমাশীল আপনি ক্ষমা করে দিতে ভালোবাসেন অতএব আমাকে ক্ষমা করেন। (তিরমিজি) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম নিজে লাইলাতুল কদর লাভ করার জন্য রমজানের শেষ দশ রাত জাগ্রত ইবাদতে কাটিয়েছেন এবং উম্মতে মুহাম্মদীকেও সারারাত জেগে ইবাদত বন্দেগি করার নির্দেশ দিয়েছেন । তাই বান্দার উচিত এই রমজানের শেষ দশকে বেশি বেশি করে ইবাদত করা এবং পূর্ণতা লাভ করা।
হযরত আয়েশা(রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন এ কথা আমি রাসুল সাঃ কে জিজ্ঞাসা করলাম হে আল্লাহ রাসুল আমি যদি কদরের রাত সম্পর্কে অতিবাহিত হতে পারি তবে আমি কি করবো তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাম আমাকে এই দোয়াটি পাঠ করার জন্য বললেন। ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি’। (তিরমিজি, হাদিস নং : ৩৫১)। লাইলাতুল কদর শবে কদরের ফজিলত অপরিসীম ।তাই সারা রাত জাগরণ করে সঠিকভাবে ইবাদত বন্দুগিতে মননিবেশ করা আমাদের কর্তব্য বেশি বেশি করে নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ, সালাতুস তসবি, উমরী কাজা নামাজ ,কোরআন তেলাওয়াত, তওবা –ইসতেগফার, দোয়া দরুদ সহ ইত্যাদি নফল আমলের প্রতি মনোযোগী হওয়া আমাদের একান্ত কর্তব্য।